নাম বিভ্রান্তি [১ম পর্ব] : মধুমঞ্জরি, মাধবীলতা, মালতীলতা, মাধুরীলতা
প্রথম পর্বের বিষয়
“মধুমঞ্জরী, মাধবীলতা, মালতীলতা, মাধুরীলতা”। এই ৪টা উদ্ভিদ নিয়ে সবুজ প্রেমিদের
মধ্যে বেশ বিভ্রান্তি কাজ করে। বিশেষত, নাম নিয়ে যেমন, অনেকেই মনে করে মধুমঞ্জরি, মাধবী
লতা একই উদ্ভিদ আবার অনেকেই মনে করে মধুমঞ্জরি আর মাধুরীলতা একই উদ্ভিদ। যদিও চারটি
উদ্ভিদ এর ফুল গুলোর রং আর আকৃতিতে যথেষ্ট পার্থক্য আছে বিভ্রান্তি মূলত নামে তাই এই
লিখাতে আমরা এই উদ্ভিদ গুলোর পার্থক্য সম্পর্কে জানব –
– মধুমঞ্জরী /
মধুমালতি (Quisqualis indica)
– মাধবীলতা (Hiptage benghalensis)
– মালতীলতা (Aganosma dichotoma)
– মাধুরীলতা (Combretum coccineum)
মধুমঞ্জরী
মধুমঞ্জরী, Photo: wikipedia |
এই ফুলের ব্যাপারে বিস্তারিত লিখার আগে এটার নামের বানানটা নিয়ে আগে কথা বলা প্রয়োজন। বেশির ভাগ মানুষই এই ফুলের নামের বানানটা ভুল লিখে। “মধুমঞ্জরি” বানানটাই বেশি দেখা যায় তবে সঠিক বানানটি হচ্ছে মধুমঞ্জরী। মধুমঞ্জরী নামটা দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
অন্য নামঃ মধুমালতি, হরগৌরী, লাল চামেলী ইত্যাদি
ইংরেজি নামঃ Rangoon Creeper, Chinese honeysuckle
বৈজ্ঞানিক
নামঃ Quisqualis indica
পরিবারঃ Combretaceae
কাষ্ঠল লতা জাতীয় দীর্ঘজীবী উদ্ভিদ। ফুল প্রায় সারা বছরই
ফোটে তবে, ফুল সব চেয়ে বেশি দেখা যায় মার্চ থেকে জুলাই মাসে। এই ফুলের গন্ধ বেশ মিস্টি।
কাটিং থেকে বা লতা কেটে মাটিতে পুতে দিলেও চারা হয়।
মাধবীলতা
মাধবীলতা, Photo: wikipedia |
বাংলা নামঃ মাধবী লতা, মাধৈ লতা
ইংরেজি নামঃ Helicopter Flower
পরিবারঃ Malpighiaceae
বৈজ্ঞানিক নামঃ Hiptage benghalensis – ‘benghalensis’ শব্দ টা ‘bengal’ থেকে এসেছে। মাধবীলতা আমাদের এই অঞ্চলের উদ্ভিদ যদিও আমরা অনেকেই জানি না। এই গাছ বর্তমানে বেশ দুঃস্প্রাপ্য বলা যায়।
মধুমঞ্জরীর মত
মাধবীলতাও
কাস্টল লতা জাতিয় উদ্ভিদ। শীতে মাধবীলতার পাতা ঝরে গিয়ে প্রায় পাতা হীন ডালপালায় থোকা
থোকা সুগন্ধি যুক্ত সাদা রঙের ফুল ফোটে। ফুল এর স্থায়িত্ব খুবই কম, ফোটার ১ সপ্তাহের
মধ্যে ঝরে যায়। ফুল বসন্ত এবং গ্রীষ্মে ফোটে এবং অনেক সময় বর্ষা অব্ধি স্থায়ী হয়। ফুল
থেকে ফল হয়। ফল দেখতে শাল / গজারি /
গর্জন এর ফুলের মত, তিনটি পাখা যুক্ত। তবে গজারি ফলের চেয়ে সাইজে ছোট। ফল বাতাসে
ভেসে কিছু দূর উড়ে যেতে পারে। বীজ থেকে চারা করা যায়
আবার কাটিং রোপণ করলেও হয়।
মালতীলতা
মালতীলতা, Photo: wikimedia |
ইংরেজি নামঃ Clove scented echites, Malati
Paalamalle, Mogari, Gondhomaloti, Maalatilata
বৈজ্ঞানিক
নামঃ Aganosma dichotoma
পরিবারঃ Apocynaceae
এটি চিরসবুজ কাস্টল লতা জাতীয় উদ্ভিদ যা অনেক উপর পর্যন্ত
আরোহন করতে পারে। মালতীলতার ফুল ফোটে বর্ষাকালে। ফুলের রং সাদা, অনেকটা শিউলি ফুলের
মত।
মাধুরীলতা
মাধুরীলতা, Photo: flowerspicture.org |
বৈজ্ঞানিক
নামঃ Combretum coccineum
পরিবারঃ Combretaceae
মাধুরীলতার আদি নিবাস মাদাগাস্কার। এটাও কাস্টল লতা জাতিয়
উদ্ভিদ। এই গাছের ঝাড় অনেক বড় হয়। কচি ডালপালা সবুজ ও বাদামী রোম বিশিস্ট। ও ডালের
আগায় চ্যাপ্টা মঞ্জুরিতে কমলা লালে মিশানো ফুল আসা শুরু হয় হেমন্তে যা গ্রীস্ম পর্যন্ত
থাকে। ফুল ফোটে প্রায় অক্টোবর থেকে মে মাস পর্যন্ত।
এই চারটি
উদ্ভিদের বিভ্রান্তি নামের জন্য হলেও মাধুরীলতা’র সাথে ফুলের মিল থাকায় অনেকেই চিরুনি ফুল কে মাধুরীলতা মনে করে থাকে। তাই,
এই বিভ্রান্তি দূর করার জন্য নিচে চিরুনি ফুলের পরিচয় তুলে ধরা হলো –
চিরুনি ফুল
চিরুনি ফুল, Photo: FairchildGarden |
বাংলা নামঃ চিরুনি ফুল
ইংরেজি নামঃ Monkey brush vine, Monkey brush
বৈজ্ঞানিক
নামঃ Combretum rotundifolium
পরিবারঃ Combretaceae
চিরুনি ফুল আমাদের দেশীয় গাছ নয়, উত্তর আমেরিকার
ফুল। এটাও কাস্টল লতা জাতিয় উদ্ভিদ
যা অনেক উপর পর্যন্ত আরোহন করতে পারে। ফুল যখন পরিপূর্ণ ফোটে প্রতিটি রেণু থেকে শলাকা বের হয়ে গোলাকার চিরুনীর মত আকার ধারণ করে
তাই একে বাংলায় চিরুনি ফুল বলা হয়।
এই লিখাটির উদ্দেশ্য
“মধুমঞ্জরী, মাধবীলতা, মালতীলতা, মাধুরীলতা” এই চারটি উদ্ভিদ তথা ফুল এর নাম নিয়ে আমাদের
মধ্যে যে বিভ্রান্তি আছে তা দূর করা। আশা করছি এই লিখার মাধ্যমে সবার এই ফুল গুলোর
নামের বিভ্রান্তি দূর হয়েছে।