কলা গাছের প্রতিটি অংশের উপকারিতা, ব্যবহার ও স্বাস্থ্যগুণ [প্রথম পর্ব]
![কলা গাছের প্রতিটি অংশের উপকারিতা, ব্যবহার ও স্বাস্থ্যগুণ [প্রথম পর্ব]](https://greendrops.info/wp-content/uploads/2025/05/কলা-গাছের-প্রতিটি-অংশের-উপকারিতা-ব্যবহার-ও-স্বাস্থ্যগুণ-প্রথম-পর্ব-780x470.webp)
বাংলাদেশে এমন কিছু গাছ আছে যেগুলো আমরা এতটাই চেনা-জানা মনে করি যে, ওগুলো নিয়ে ভাবারও প্রয়োজন হয় না। কলা গাছ ঠিক সেরকমই এক পরিচিত গাছ। প্রায় সব বাড়িতেই একটা না একটা কলা গাছ দেখা যায়। তবে আমরা অনেকেই জানি না, এই সাধারণ কলা গাছটা শুধু ফলের জন্যই নয়, এর প্রায় প্রতিটি অংশেরই রয়েছে নানা রকম ব্যবহার ও উপকারিতা। শুধু খাদ্য হিসেবে নয়, ঘর-গৃহস্থালির কাজে, আয়ুর্বেদে, এমনকি নানা অপ্রচলিত উপায়ে এই গাছের ব্যবহার হয়।
এই আর্টিকেলে আমরা কলা গাছের প্রতিটি অংশ—পাতা, কাণ্ড, শিকড়, মোচা, থোড়—সবকিছু নিয়ে আলোচনা করব। তবে সাধারণ পুষ্টিগুণ নয়, বরং এমন কিছু ব্যবহার ও গুণাগুণ তুলে ধরব, যেগুলো অনেকেরই অজানা। আশা করছি, এই সাধারণ গাছটার ভেতরে লুকিয়ে থাকা অজানা দিকগুলো হয়তো এবার আপনার চোখে পড়বে।
কলা গাছের ফুল বা মোচা

কলার মোচা একটি আয়রনসমৃদ্ধ সবজি, যা শরীরে রক্ত বাড়াতে সাহায্য করে। রক্তের প্রধান উপাদান হলো হিমোগ্লোবিন, আর মোচায় থাকা আয়রন এই হিমোগ্লোবিনকে শক্তিশালী করে তোলে। তাই যারা রক্তস্বল্পতায় ভোগেন, তাদের জন্য কলার মোচা বেশ উপকারী খাবার।
কলার মোচার বাইরের শক্ত, লালচে বা বেগুনি রঙের বড় বড় যে খোসা বা পাতা থাকে সেগুলো খাওয়া হয় না কারণ এগুলো শক্ত, আঁশযুক্ত এবং একটু তেতো স্বাদের হয়।
তবে, এগুলোর ব্যবহার পুরোপুরি ফেলনা নয়। এগুলো সাধারণতঃ
- খাবার পরিবেশনের পাত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয় (যেমন পরিবেশন করার সময় সাজানোর জন্য)। গ্রামে অনেক সময় ছোট মাছ বা শুঁটকি মোচা পাতায় মুড়িয়ে আগুনে সেঁকা হয়, এতে আলাদা সুগন্ধ হয়।
- কম্পোস্ট তৈরি করতে ব্যবহার করা যায়।
- কিছু জায়গায় গবাদি পশুর খাবার হিসেবেও ব্যবহার হয়।
কলার মোচায় থাকা আয়রন ত্বক আর চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে। এতে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম আর আয়োডিনের মতো দরকারি উপাদানও রয়েছে। আয়োডিন শরীরে গলগন্ড (গয়টার) রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে, আর এর অন্যান্য পুষ্টি দাঁত মজবুত রাখতে সাহায্য করে।
মোচায় থাকা আয়রন রক্তশূন্যতা দূর করে, আর এতে ভিটামিন ‘এ’ থাকায় রাতকানা রোগ প্রতিরোধেও ভূমিকা রাখে। কলার মোচা অল্প তেলে ভাজি করে খাওয়া যায়, আর এটা অনেকেরই খুব প্রিয় খাবার।
ঈষৎ লাল রঙের এই চোখা সবজি হাড়ের জটিলতা দূর করতে সাহায্য করে। বিশেষ করে যাদের মেনোপজ হয়ে গেছে, এমন নারীদের জন্য মোচা খুব উপকারী, কারণ এটা হাড় শক্ত করে। এছাড়া শরীরে শক্তি বাড়াতেও মোচা দারুণ কাজে দেয়। তবে টাটকা মোচা খেলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায়।
কলার মোচা (ফুল) দিয়ে বানানো রেসিপিগুলো –
ভাজি ও ভর্তা জাতীয় রেসিপি – মোচার ভর্তা / মোচার ভাজি / মোচার চচ্চড়ি / মোচার ঝাল ভর্তা (মরিচ ও সরিষা দিয়ে) / নারকেল দিয়ে মোচার ভর্তা
কারি ও তরকারি জাতীয় রেসিপি – মোচার ঘন্ট (বেঙ্গলি স্টাইল) / ছোলার ডাল দিয়ে মোচার তরকারি / মোচার দম (spicy gravy curry) / চিংড়ি দিয়ে মোচার কারি / মোচার মালাই কারি (নারকেল দুধ দিয়ে) / মুড়িঘণ্ট স্টাইলে মোচার ঘন্ট (ভুনা ডাল দিয়ে) / শুক্তোতে মোচা (মিশ্র সবজির শুক্তোতে)
ডাল ও পাতলা তরকারি – মোচা দিয়ে মসুর ডাল / মোচা দিয়ে ছোলার ডাল / সরষে-মোচার পাতলা ঝোল
স্ন্যাকস ও ভাজাভুজি – মোচার বড়া / মোচার চপ / মোচার পাকোড়া / মোচার নারকেল কাটলেট / মোচা-আলুর পেটিস / মোচার স্পাইসি ফ্রাই বল
বিশেষ এবং ফিউশন রেসিপি – মোচার পোলাও / মোচা দিয়ে খিচুড়ি / মোচা ও বেগুন দিয়ে নিরামিষ কোরমা / মোচা-পনির কারি / মোচা দিয়ে স্প্রিং রোল (ফিউশন ফুড) / মোচার পরোটা (Stuffed Paratha) / মোচা দিয়ে ভেজ কাটলেট / মোচা-চিকেন কাটলেট (নন-ভেজ ফিউশন) / মোচা দিয়ে ভেগান বানানার ফ্লাওয়ার কিমা
আচার ও শুকনো আইটেম – মোচা শুকিয়ে আচার (ড্রাই মোচা আচার) / মোচা ও কাঁচা মরিচ দিয়ে শুকনো চাটনি পাউডার
যারা এই রেসিপিগুলোর সঙ্গে পরিচিত নন বা যাঁদের এলাকায় এগুলো খুব একটা প্রচলিত নয়, তাঁরা চাইলে ইন্টারনেটে বা ইউটিউবে ঘেঁটে সহজেই এসব রেসিপি খুঁজে নিতে পারেন। একটু সময় দিলেই মিলবে অসাধারণ সব রান্না শেখার সুযোগ—যা হবে মজাদার, নতুন স্বাদের এবং একই সঙ্গে পুষ্টিকর।
চলমান —